ইরোসিভ অ্যান্ট্রাল গ্যাস্ট্রাইটিসঃ
কি কেন এবং চিকিৎসা ও পরিত্রাণের উপায়
ইরোসিভ অ্যান্ট্রাল গ্যাস্ট্রাইটিস হলো পাকস্থলীর এক প্রকার প্রদাহ জনিত সমস্যা অর্থাৎ পাকস্থলীর নিচের অংশের অ্যান্ট্রামের আবরণীতে প্রদাহের ফলে রক্তিমাভ যে ক্ষত তৈরি হয়।
এটা সাধারণত হিস্টোপ্যাথলজি করে নির্ণয় করা হয়, তবে খুব সহজেই এন্ডোসকপি করেও ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।
গ্যাস্ট্রাইটিস সাধারণত ২ প্রকারঃ
১) অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রাইটিস –
অনধিক ৬ মাস ব্যাপী যে প্রদাহ জনিত সমস্যা বিরাজ করে ;
২) ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস –
৬ মাস বা ততোধিক কাল ব্যাপী যে প্রদাহ জনিত সমস্যা বিরাজ করে ;
ইরোসিভ অ্যান্ট্রাল গ্যাস্ট্রাইটিস কেন হয়?
১) একিউট গ্যাস্ট্রাইটিস –
ক) ক্ষতসৃষ্টিকারী ওষুধ (অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, ক্লোফেনাক, কিটোপ্রোফেন, আইবুপ্রোফেন, ইন্ডোমেথাসিন ইত্যাদি)
খ) এইচ. পাইলোরি ইনফেকশন (প্রাথমিক পর্যায়ে)
গ) মদ্যপান
ঘ) অন্যান্য ওষুধ (আয়রন জাতীয় ওষুধ, অ্যালেনড্রোনেট, ইবানড্রোনেট, রিসেড্রোনেট ইত্যাদি)
ঙ) মারাত্মক শারীরবৃত্তীয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে (অগ্নিদগ্ধ হওয়া, দেহের একাধিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কের স্নায়ুবৈকল্য)
চ) গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারির পর বাইল রিফ্লাক্স
ছ) ভাইরাল ইনফেকশন (এইচআইভি /এইডস রোগীর ক্ষেত্রে CMV(সাইটোমেগালোভাইরাস)/ হার্পিস সিম্প্লেক্স ভাইরাস জনিত প্রদাহ)
২) ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস –
ক) এইচ পাইলোরি ইনফেকশন
খ) অটোইমিউন (পারনিসিয়াস অ্যানেমিয়া),
গ) গ্যাস্ট্রিক সার্জারির পর;
ঘ) ইনফেকশন – CMV, যক্ষ্মা
ঙ) পরিপাক তন্ত্রের প্রদাহ জনিত রোগের কারণে – ক্রন’স ডিজিজ,
চ) শরীরের অন্য রোগের কারণে – সারকয়ডোসিস, GVHD,
ছ) অজানা কারণে – গ্রানুলোমেটাস গ্যাস্ট্রাইটিস।
কি দেখে বুঝবো গ্যাস্ট্রাইটিস হয়েছে?
(১) একিউট গ্যাস্ট্রাইটিস –
এটা সাধারণত ক্ষতপ্রবণ ও রক্তিমাভ। পাকস্থলীর আবরণীতে নিউট্রোফিলের আধিক্য দেখা যায় যা অতিরিক্ত মদ্যপান, অ্যাসপিরিন কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন অথবা খালি পেটে হঠাৎ গরম চা কফি, লেবুর রস গ্রহণের ফলে হতে পারে।
একিউট গ্যাস্ট্রাইটিসে অনেক সময় কোন লক্ষ্মণ উপসর্গ থাকে না, তবে বদহজম, পেটে গ্যাস, খাবারে অরুচি, বমি কিংবা বমি বমি ভাব এবং রক্ত বমি ও কালো পায়খানাও দেখা দিতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত আরোগ্য লাভ হয় এবং কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না।
কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোসকপি ও বায়োপসির প্রয়োজন পড়ে আলসার কিংবা ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য।
(২) ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস –
(এইচ. পাইলোরি জনিত)
এতে পাকস্থলীর আবরণীতে লিম্ফোসাইট ও প্লাজমা কোষের আধিক্য থাকে। অধিকাংশ রোগীরই তেমন কোনো লক্ষণ উপসর্গ থাকে না।
চিকিৎসা এবং পরিত্রাণের উপায় কি?
একিউট গ্যাস্ট্রাইটিসঃ
যেহেতু একিউট গ্যাস্ট্রাইটিস হলো পাকস্থলীর একটি তাৎক্ষণিক প্রদাহ জনিত সমস্যা যেখানে লক্ষ্মণ উপসর্গবিহীন অবস্থা থেকে বদহজম, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব কিংবা বমি এমনকি রক্ত বমি ও কালো পায়খানা হতে পারে ; তাই প্রদাহ নিবারণ এবং কি কারণে প্রদাহ হচ্ছে তার চিকিৎসা করাই যথোপযুক্ত।
অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান পরিহার করা, অ্যাসপিরিন ও NSAIDs জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা, অতিরিক্ত গরম চা কফি ও তরল খাবার গ্রহণ এবং মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা –
(স্বল্পতম সময়ের জন্য লক্ষ্মণ উপসর্গ নিবারণকারী চিকিৎসা হিসেবে)
১) অ্যান্টাসিড
২) PPI – ইসোমিপ্রাজোল, ওমিপ্রাজল, ল্যানসোপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ডেক্সল্যানসোপ্রাজল
৩) প্রোকাইনেটিক – ডমপেরিডন
৪) অ্যান্টিইমেটিক – মেটোক্লোপ্রামাইড
ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিসঃ
এক্ষেত্রে যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদি প্রদাহ জনিত সমস্যা বিরাজ করে এবং অধিকাংশ রোগীই লক্ষ্মণ উপসর্গবিহীন থাকে এবং কোন চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না ; কিন্তু যাদের বদহজম থাকে তাঁরা এইচ. পাইলোরি নির্মূলকরণ চিকিৎসা দ্বারা কিছু উপকার পেয়ে থাকেন।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬