উচ্চ মাত্রার জন্ডিস বা লেপটোস্পাইরোসিসঃ

Share This Post

এটি একটি কমন প্রাণীসংক্রান্ত (ইঁদুর, কুকুর) রোগ যা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার মৌসুমি জলবায়ুর দেশে বন্যার সময় বেশি দেখা দেয়। লেপটোস্পাইরার জীবাণু সুতার মতো কয়েলের ন্যায় প্যাঁচানো যার প্রান্তটি হুকের ন্যায়।

এই জীবাণুটি ইঁদুরের কিডনির কনভলইউটেড টিউবিউলে থাকে এবং প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয় বিশেষ করে বদ্ধ জলাশয়ে, পুকুরের পানিতে, সুয়ারেজ ড্রেনে এবং বেকারিতে।

মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় কাটাছেঁড়া চর্ম ও মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে। দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিত পানিতে অবস্থানের ফলে এমনটা হতে পারে। তাই বিশেষ করে সুইপার, বেকারির কর্মী, কৃষক, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা ব্যক্তিদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

রোগে লক্ষ্মণ উপসর্গসমূহঃ

সংক্রমণের ১-২ সপ্তাহ পর রক্তে থাকা এই ব্যাকটেরিয়া সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ও মেনিনজেস (মস্তিষ্কের আবরণী)।

উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর, শারীরিক দুর্বলতা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, মাংস পেশীর ব্যথা (পিঠের ও পায়ের), ফটোফোবিয়া, ইউভিয়াইটিস, কনজান্ক্টিভাইটিস, উচ্চ মাত্রায় জন্ডিস (রক্তের বিলিরুবিন ৫০-৬০ এরও বেশি হতে পারে), নাক দিয়ে রক্ত পড়া, কাশির সাথে রক্ত পড়া, রক্ত বমি, বমি, কালো পায়খানা, ডায়রিয়া, ফুসফুস থেকে রক্ত ঝরা, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, কিডনি ফেইলিউর (AKI), প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, হৃদযন্ত্রে পেরিকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস, চামড়ায় ফুসকুড়ি বা রেশ, পারপুরা, ব্রুইজিং, মেনিনজাইটিস দেখা দেওয়া ইত্যাদি। আর এসবকিছু মিলে চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগের লক্ষ্মণ প্রকাশ পেলে তাকে ওয়েল’স ডিজিজ (Weil’s disease) বলে। আর এতে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি।

জন্ডিস হয়েছে বুঝবো কি করে… By Dr Sayedul Haque

রোগ নির্ণয়ঃ

CBC : রক্তে নিউট্রোফিলের আধিক্য, প্লাটিলেট কাউন্ট মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়া (এমনকি ১০,০০০ এর নিচে নেমে আসা যার ফলে রোগীর দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হয়ে মৃত্যর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলা)

S. CPK : বেড়ে গিয়ে মাংস পেশীর ব্যথা করে।

S. Bilirubin : > 50-60 mg/dl হতে পারে।

SGPT, SGOT, GGT বাড়তে পারে।

Prothrombin time বহুলাংশে বেড়ে যায় > ৩০ হতে পারে।

Urine R/E : অ্যালবুমিন, RBC এবং Cast থাকে।

S. Creatinine : > 10 হতে পারে এবং  কিডনি ফেইলিউর হয়ে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে।

CXR : ফুসফুসে পানি কিংবা কনসলিডেশন, হৃদযন্ত্র বড় হয়ে যাওয়া (পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন)

ECG : মায়োকার্ডাইটিস

USG of W/A : লিভার বড় হয়ে যাওয়া, গল ব্লাডার সংকুচিত হয়ে যাওয়া।

ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনোসিসঃ

ডেঙ্গু

ম্যালেরিয়া

টাইফয়েড

স্ক্রাব টাইফাস

হান্তাভাইরাস ইনফেকশন

নিশ্চিত ভাবে লেপটোস্পাইরোসিস ডায়াগনোসিস করতে হলে –

১) লেপটোস্পাইরার জীবাণু বের করা

Blood culture : রোগের ১০ দিনে পজিটিভ হয়,

Urine culture : রোগের ২ য় সপ্তাহে পজিটিভ হয়,

২) Serological test

MAT (Microscopic Agglutination Test) : এটাই সবচেয়ে প্রচলিত টেস্ট যা ১ম সপ্তাহান্তেই পজিটিভ হয়

IgM (ELISA)

Rapid ICT

৩) PCR test

রক্তে এবং প্রস্রাবে লেপটোস্পাইরার DNA দেখে ১ ম সপ্তাহেই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।

জন্ডিস কি এবং কেনো হয়? By Dr Sayedul Haque

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণ পরিচর্যা – পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম, সহনশীল ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা,

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগটি স্বল্প চিকিৎসাতেই সেরে যায়।

চিকিৎসায় মূলত ডক্সিসাইক্লিন, পেনিসিলিন কিংবা সেফট্রাইঅ্যাকসোনে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায়।

চোখের আইরাইটিসের জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে রক্ত পরিসঞ্চালন, ডায়ালাইসিস কিংবা আইসিইউতে চিকিৎসা লাগতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়ঃ

সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ডক্সিসাইক্লিন ২০০ মি.গ্রা. ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডাঃ এম সাঈদুল হক

সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।

০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮

০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

আলসারেটিভ কোলাইটিস, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার
লিভার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে হতে পারে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার আলসারেটিভ কোলাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে প্রতি ৬ জনের একজন মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?
অন্যান্য

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?

হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।