আলট্রাসনোগ্রাফি না ফাইব্রোস্ক্যান : ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে কোনটি উপযুক্ত?

Share This Post

লিভার আমাদের দেহের একটি বড় অঙ্গ যা প্রতিনিয়ত একটি ফ্যাক্টরি বা কারখানার ন্যায় কাজ করে এবং আমাদের শরীরে গৃহীত বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বিপাকের মাধ্যমে কিছু গুদামজাত করে এবং কিছু প্রয়োজনীয় অংশ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিয়ে দেহের ক্ষয়পূরণ, গঠন ও বৃদ্ধির কাজ করে ; গৃহীত ওষুধ লিভার হতে তৈরি অ্যালবুমিন নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের সাথে বন্ধন তৈরি করে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতস্থানে পৌঁছে দেয় ; বিষাক্ত পদার্থকে ডিটক্সিফাই অর্থাৎ নির্বিষ করে দেহ থেকে নিষ্কাশন করে; রোগ জীবাণু ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে লিভারের পুনর্জন্ম ক্ষমতা বেশি তাই লিভার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লক্ষ্মণ উপসর্গ প্রকাশ পায় না…. এমনকি লিভারের মাত্র ১৫ শতাংশ কোষ বেঁচে থাকলেও লিভার তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে।
লিভারে প্রদাহজনিত অনেকগুলো রোগের মধ্যে ফ্যাটি লিভার অন্যতম যা হতে লিভার ফাইব্রোসিস, সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার হলো বর্তমান সভ্যতার উন্নয়নের বিড়ম্বনাজনিত একটি রোগ… সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, হাইলি প্রসেসড খাবার গ্রহণ এবং ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আমাদের জীবনকে বিড়ম্বিত করে তুলছে। ফলশ্রুতিতে আমরা আয়েশি জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি এবং মেটাবোলিক সিন্ড্রোম অর্থাৎ দেহের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে স্থূলাকৃতি ধারণ করছি, ফ্যাটি লিভার, রক্তে চর্বির অাধিক্য বা ডিসলিপিডেমিয়া, রক্তে শর্করার অাধিক্য বা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি।
এক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ আয়েশি জীবন যাপন করেন এবং প্রায় ৩৩ – ৩৫ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত — অর্থাৎ এটি একটি নিরব ঘাতক ব্যাধির ন্যায় আজ আমাদের সমাজ জীবনে ছড়িয়ে পড়েছে এবং জীবন আশংকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোর তরুণ থেকে শুরু করে যুবক বয়োবৃদ্ধরাও আজ অহরহ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছেন এমনকি আজকাল শিশুদের মাঝেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই লিভার সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
তাই ফ্যাটি লিভার নির্ণয় ও তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা করা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিভারে যখন ৫ শতাংশের বেশি চর্বির আধিক্য দেখা দেয় তখনই তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। বিগত দশকগুলোতে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের জন্য বহু গবেষণা করা হয়েছে এবং এখনও তা চলমান। এর মাঝে আলট্রাসনোগ্রাফি এবং ফ্যাইব্রোস্ক্যান অন্যতম।
আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে খুব সহজে ফ্যাটি লিভার নির্ণয় করা যায় — এটা সহজলভ্য, স্বল্পব্যয়ী এবং তিনটি গ্রেডে লিভারে চর্বির পরিমাপ করা হয়। ফলোআপও করা যায়। কিন্তু বিপত্তি হলো লিভারে অন্তত ৩০ শতাংশের বেশি চর্বি হলে পরেই আলট্রাসনোগ্রাফিতে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে।
অন্যদিকে ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে আরও নিখুঁতভাবে লিভারের চর্বির পরিমাপ করা যায়, এমনকি ৫ শতাংশের বেশি চর্বি হলেই তা নিরূপণ করা যায়। শুধু তা-ই নয় লিভার ফাইব্রোসিস এমনকি সিরোসিসও পুংখানুপুংখরূপে নির্ণয় করা যায়। ছয় মাস অন্তর অন্তর ফ্যাটি লিভারের ফলোআপেও ফ্যাইব্রোস্ক্যান অত্যন্ত কার্যকরী। তাই এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। কিন্তু এটি একটি অত্যন্ত দামী মেশিন, ব্যয়বহুল পরীক্ষা, ততটা সহজলভ্য নয়, আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি কেন্দ্রে রয়েছে।

এসবকিছু বিবেচনায় ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে ফাইব্রোস্ক্যান আলট্রাসনোগ্রাফির চেয়েও অধিক উপযুক্ত।

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

আলসারেটিভ কোলাইটিস, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার
লিভার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে হতে পারে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার আলসারেটিভ কোলাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে প্রতি ৬ জনের একজন মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?
অন্যান্য

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?

হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।