ফ্যাটি লিভার হলো লিভারে যখন ৫% এরও বেশি চর্বি জমে যায় এবং এর ফলে লিভারের আকার আকৃতি বৃদ্ধি পায় ও লিভারের স্বাভাবিক কার্যাবলী হ্রাস পায়।
বিশ্বে প্রতি ৪ জনে ১ জন ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত এবং এ রোগের অগ্রগতির পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ন্যাশ (NASH)
ন্যাশ হলো লিভারে যখন ৫% এরও বেশি চর্বি থাকে এবং সেই সাথে লিভারের কোষমালায় প্রদাহ ও বেলুনের মতো ফুলে থাকা কোষের সমন্বয় ঘটে।
এতে লিভার দ্রুত খারাপ হয়ে সিরোসিস ও তার জটিলতা জনিত পেটে পানি, পায়ে পানি, রক্ত বমি, কালো পায়খানা, ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সহ লিভার ক্যান্সারের আবির্ভাব ঘটতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাাপী ৭-১২% প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ন্যাশ রোগে আক্রান্ত যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৩% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৩৪ জন ব্যক্তি অতিরিক্ত চর্বি জনিত লিভার রোগে (ফ্যাটি লিভার) ভুগছেন। আবার এদের অনেকেই অতিরিক্ত চর্বি জনিত লিভার প্রদাহে (ন্যাশ) আক্রান্ত।
বর্তমান বিশ্বে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো ন্যাশ।
আগামী ২০ বছরের মধ্যে ন্যাশ হতে যাচ্ছে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ১ নম্বর কারণ।
যারা ন্যাশ এ আক্রান্ত হতে পারেনঃ
দেহের স্থুলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার ও আয়েশি জীবন যাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তিবর্গ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
কি দেখে বুঝবো ন্যাশ (NASH) হয়েছে?
★ দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া,
★ শারীরিক দুর্বলতা বা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া,
★ কাজে আলস্য, শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, শরীরে শক্তি না পাওয়া, বিরক্তি বোধ করা,
★ পেটের উপরিভাগে ডান পাশে অস্বস্তি লাগা কিংবা ব্যথার অনুভূতি হওয়া।
★ একই সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য (TG, Cholesterol), উচ্চ SGPT, হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
★ সেই সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি, হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি, বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ছে।
কিভাবে ন্যাশ (NASH) নির্ণয় করবো?
★ আলট্রাসনোগ্রাফি করে প্রাথমিকভাবে ন্যাশ নির্ণয় করা যায়।
★ লিভারে চর্বির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য এবং চিকিৎসা ও ফলোআপে ফাইব্রোস্ক্যান অনন্য, আর
★ লিভার বায়োপসি হলো ন্যাশ নির্ণয়ের গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা।
তাই ন্যাশ প্রতিরোধের এখনই সময়ঃ
১) দেহের বাড়তি ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখতে হবে।
২) প্রতি দিন নিয়ম করে (অন্তত ১ ঘন্টা) শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
৩) পর্যাপ্ত ঘুম (অন্তত ৭-৮ ঘন্টা, রাত ১০ টা থেকে ভোর ৫-৬ টা পর্যন্ত) ও বিশ্রাম নিতে হবে।
৪) বাজে তেল ও অধিক শর্করা জাতীয় খাবার (ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, চিনি মিষ্টি গুড়, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও মিষ্টি জাতীয় ফল) যথাসম্ভব কম এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরিহার করতে হবে।
৫) প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, কার্বনেটেড কোমল পানীয় এড়িয়ে যেতে হবে।
৬) প্রচুর পরিমানে আঁশযুক্ত ফল ও তাজা শাক সবজি খেতে হবে।
৭) তেল সমৃদ্ধ বড় মাছ খেতে হবে।
৮) কুসুম সহ ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে।
৯) টক দই, পনির খুবই উপাদেয়।
১০) চিনি ছাড়া গ্রীন টি, কফি; সকল প্রকার বাদাম, সালাদ ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাস ন্যাশ নিরাময়ে সহায়ক।
সর্বোপরি আয়েশি জীবন পরিহার করে কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে (সংক্ষিপ্ত পথে পায়ে হেঁটে যাওয়াই শ্রেয়, ৫-৬ তলা ভবনে লিফটে না চড়ে পায়ে হেঁটে ওঠা যেতে পারে)
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট,
ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৬৫, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬