গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কি ও কেন হয়?

Share This Post

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কি এবং কেন হয়?

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলতে সাধারণত আমরা ‘পেপটিক আলসার’কে বুঝে থাকি যেখানে আলসার বা ঘা হয় খাদ্য নালীর নিচের অংশে, পাকস্থলী কিংবা ডিওডেনামে, পাকস্থলীর বাইপাস সার্জারি করার পরে জেজুনামে অথবা বিরলতমভাবে মেকেল’স ডাইভার্টিকুলামের কাছাকাছি আইলিয়ামে।
আলসার বা ঘা একিউট বা তাৎক্ষণিক কিংবা ক্রনিক বা দীর্ঘ মেয়াদি হতে পারে।
আলসার ঘনীভূত হয়ে পাকস্থলী কিংবা ডিওডেনাম ফুটো হয়ে যেতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসারঃ
গ্যাস্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসারকে একত্রে ‘পেপটিক আলসার’ বলা হয় এবং এই আলসারের হার উন্নয়নশীল দেশে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
পুরুষ ও মহিলা ভেদে ডিওডেনাল আলসারের অনুপাত ৫:১ থেকে ২:১; যেখানে গ্যাস্ট্রিক আলসারের অনুপাত ২:১।
ক্রনিক গ্যাস্ট্রিক আলসার – সাধারণত একটি হয় ; যার ৯০% শতাংশই পাকস্থলীর নিচের দিকের অ্যান্ট্রামে অথবা বডি ও অ্যান্ট্রামের সংযোগস্থলে হয়ে থাকে।
ক্রনিক ডিওডেনাল আলসার – সাধারণত ডিওডেনামের প্রথম ভাগে হয় এবং ৫০% শতাংশ ক্ষেত্রে ডিওডেনামের সামনের দেওয়ালে হয়ে থাকে।

গ্যাস্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসার একত্রে থাকতে পারে ১০% শতাংশ ক্ষেত্রে এবং একাধিক পেপটিক আলসার পাওয়া যায় ১০-১৫% শতাংশ রোগীর মাঝে।

যেভাবে আলসার তৈরি হয়ঃ
শুরুতে পাকস্থলী হতে অ্যাসিডের অতি নিঃসরণ হয় নিম্নোক্ত ধাপে –
(১) পাকস্থলীর নিচের অংশের অ্যান্ট্রামের D-cell এর Somatostatin কমে যায়,
(২) পাকস্থলীর বডি’র G-cell হতে Gastrin নিঃসরণ বেড়ে যায়,
(৩) পাকস্থলীর দেওয়ালের Parietal cell হতে HCL (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড) এর নিঃসরণ বেড়ে যায়
(৪) ডিওডেনামে অ্যাসিডের বৃদ্ধি পাকস্থলীতে Parietal cell এর কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে
(৫) পাকস্থলী ও ডিওডেনামে আরও বেশি প্রদাহ হয় এবং আলসার বা ঘা তৈরি হয়।

এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া, মানবদেহের IL-1, TNF-alpha, এবং পারিপার্শ্বিক নিয়ামক যেমন ধূমপান, NSAIDs জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ ইত্যাদি মিলে একদিকে পাকস্থলীর নিচের অংশে অ্যান্ট্রাল গ্যাস্ট্রাইটিস ও অন্যদিকে পুরো পাকস্থলীতে প্যানগ্যাস্ট্রাইটিস তৈরি করে যা হতে পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডিওডেনাল আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার তৈরি করে।

পেপটিক আলসারের লক্ষ্মণ উপসর্গঃ

এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা যা নিজগুণে বাড়তে কমতে পারে এবং দশকব্যাপী স্থায়ী হতে পারে।
বারাবার পেটে ব্যথা বিশেষ করে
(১) পেটের উপরিভাগে মাঝ বরাবর ব্যথা,
(২) ব্যথার সাথে খাবারের সম্পর্ক (খাবার খাওয়ার পর ব্যথা কমে যাওয়া – ডিওডেনাল আলসার নির্দেশ করে আর খাবারের পরে ব্যথা বেড়ে যাওয়া – গ্যাস্ট্রিক আলসার নির্দেশ করে)
(৩) ব্যথার ধারাবাহিকতা – রাতের বেলায় ব্যথার তীব্রতায় ঘুম ভেঙে যাওয়া।

মাঝে মাঝে বমি হতে পারে ৪০% শতাংশ ক্ষেত্রে; প্রতি দিন বমি হলে ধরে নিতে হবে দীর্ঘ মেয়াদি আলসারের জন্য জটিলতা জনিত GOO (গ্যাস্ট্রিক আউটলেট অবস্ট্রাকশন) হয়ে গিয়েছে।
এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষ্মণ উপসর্গ থাকে না, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি কিংবা যারা NSAIDs জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন – যেখানে ব্যথা থাকে না কিংবা থাকলেও এত কম যে মনে হয় পেটের উপরিভাগে অস্বস্তিবোধ অনুভূত হয়।
মাঝে মাঝে কারও ক্ষেত্রে খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব কিংবা অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আলসার একেবারেই নিশ্চুপ থাকতে পারে যা কি না প্রাথমিকভাবে দীর্ঘ মেয়াদি রক্ত ক্ষরণের ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতারূপে দেখা দিতে পারে ; হঠাৎ রক্ত বমি কিংবা তাৎক্ষণিক পাকস্থলী ফুটো হয়ে যাওয়া বা Perforation হতে পারে ; অন্য দিকে কারও কারও কোনরূপ আলসারের ব্যথা ছাড়াই পৌনপুনিক তাৎক্ষণিক রক্তপাত হতে পারে।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাঃ

(১) এন্ডোসকপি –
এন্ডোসকপি হলো সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা।
(২) বায়োপসি –
গ্যাস্ট্রিক আলসার মাঝে মাঝে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে আর তাই অবশ্যই সেই আলসার থেকে বায়োপসি নিতে হবে এবং আলসার শুকানো পর্যন্ত ফলোআপ করতে হবে।
(৩) এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া নির্ণয় –
নন-ইনভেসিভ
UBT (ইউরিয়া ব্রেথ টেস্ট)
Faecal antigen test

ইনভেসিভ (অ্যান্ট্রাল বায়োপসি)
হিস্টোলজি
RUT (Rapid Urease Test)

এর মাঝে UBT এবং Faecal Antigen Test ই সেরা কেননা এগুলো সুলভ, কার্যকর, মোক্ষম এবং অক্ষতিকর।

ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

আলসারেটিভ কোলাইটিস, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার
লিভার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে হতে পারে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার আলসারেটিভ কোলাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে প্রতি ৬ জনের একজন মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?
অন্যান্য

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?

হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।