হার্পিস জোস্টার বা শিঙ্গলসঃ

Share This Post

এটা পুনর্জাগরিত ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস দ্বারা হয় যা দিয়ে সাধারণত চিকেন পক্স হয়ে থাকে।

প্রাথমিক ভাবে এই ভাইরাস চিকেন পক্স তৈরি করে এবং এ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর স্নায়ুতন্ত্রের মূলে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
পরবর্তীতে এটা পুনর্জাগরিত হয়ে ব্যথাময় ফোস্কার ন্যায় চর্মরোগ তৈরি করে।

লক্ষ্মণ উপসর্গসমূহঃ

সাধারণত একটি কিংবা দুটি স্নায়ু মূলের বিস্তৃতি বরাবর ফুসকুড়ির ন্যায় চর্মরোগ দেখা দেয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘাড়, পিঠ এবং বুকে দেখা দেয় এবং সাধারণত শরীরের এক পাশেই হয়ে থাকে।
যাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তাঁদেরই এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
এই ফুসকুড়িগুলো সাধারণত ব্যথাময়, চুলকানিযুক্ত কিংবা জ্বালা-পোড়াময় হতে পারে। কারও কারও মাথা ব্যথা, চোখে আলোক সংবেদনশীলতা এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
ফুসকুড়িগুলো বিস্তীর্ণ কিংবা থোকায়থোকায় হতে পারে, নতুন ফুসকুড়ি ৩-৫ দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে সপ্তাহান্তে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, সম্পূর্ণরূপে চলে যেতে ২-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। প্রায়ই চামড়ায় স্থায়ী ক্ষত থেকে যেতে দেখা যায়।

কাদের বেশি হয়?

বয়স বাড়ার সাথে সাথে হার্পিস জোস্টারের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বয়স্কদের দীর্ঘ মেয়াদি, তীব্র ব্যথাময় জোস্টার হতে পারে।
অল্প বয়সে যাদের চিকেন পক্স হয় তাদের মধ্যে ১০% শতাংশ ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

অন্য যারা আক্রান্ত হতে পারেন –
★ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি – ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি, এইডস রোগী, অঙ্গ প্রতিস্থাপন গ্রহিতা, কেমোথেরাপি নেওয়া রোগী।
★ পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি,
★ অসুস্থ ব্যক্তি,
★ আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তি।

চিকেন পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে এই ভাইরাস কখনও চলে যায় না, বরং স্নায়ু মূলে বিশেষ করে ডর্সাল রুট গ্যাংগ্লিয়াতে থেকে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানে নিশ্চুপ থাকে এবং কোন সমস্যা তৈরি করে না। গবেষকেরা অদ্যাবধি আবিষ্কার করতে পারেননি কি কারণে এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠে, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই এমনটা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হার্পিস জোস্টার একবার হলে পুনরায় হতে পারে কি?
– হতে পারে

কি থেকে হর্পিস জোস্টার হয়?

ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস থেকে যা থেকে পূর্বে চিকেন পক্স হয়।

হার্পিস জোস্টার কি সংক্রমক?

এটা সংক্রামক নয় তবে চিকেন পক্স ছড়াতে পারে।
চর্মের সংস্পর্শে কিংবা ফোস্কা থেকে নিঃসৃত তরল হতে ছড়াতে পারে।

একবার হার্পিস জোস্টার হলে কতদিন পর্যন্ত সংক্রমণ থাকে?

ঘা শুকানো পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

জটিলতাঃ

১) পোস্ট-হার্পেটিক নিউরালজিয়া –
১০ শতাংশ ক্ষেত্রে সচরাচর এই সমস্যাটিই বেশি দেখা যায়, রোগ শুরু হওয়ার ৯০ দিন পর্যন্ত ফুসকুড়ি ওঠা জায়গায় ব্যথা হয় এবং সেটা কয়েক মাস থেকে বছর ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে।

২) চোখের হার্পিস জোস্টার অফথ্যালমিকাস –
তাৎক্ষণিক কিংবা দীর্ঘ মেয়াদি পরিণতি হতে পারে এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে।

৩) ক্ষতের ওপর ব্যাকটেরিয়া জনিত সুপারইনফেকশন – স্ট্যাফাইলোকক্কাস এবং গ্রুপ এ বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস দিয়ে হতে পারে।

৪) ক্রেনিয়াল ও পেরিফেরাল স্নায়ুর বৈকল্য।

৫) অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সংক্রমণ – মেনিঙ্গোএনকেফালাইটিস, নিউমোনাইটিস, হেপাটাইটিস, একিউট রেটিনাল নেক্রোসিস।

রোগের কারণে কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে হার্পিস জোস্টারের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। এদের অনেকেরই মারাত্মক, দীর্ঘ মেয়াদি র‌্যাশ বা চর্ম রোগ এবং বিস্তৃত হার্পিস জোস্টার থাকে।

প্রতিরোধের উপায়ঃ

রিকম্বিনেন্ট জোস্টার ভ্যাকসিন (RZV, Shingrix) রোগ প্রতিরোধ ও জটিলতা নিরসনে সহায়তা করে।

চিকিৎসাঃ

এর কোন নিরাময়কারী চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষ্মণ উপসর্গ নিরাময়ে কিছু চিকিৎসা রয়েছে।

★ অ্যান্টিভাইরাল –
অস্বস্তি লাঘব ও দ্রুত লক্ষ্মণ উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে যদি রোগ লক্ষ্মণ প্রকাশের ৭২ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হয়, এমনকি ব্যথা নিরাময়েও (পোস্ট-হার্পেটিক নিউরালজিয়া) সহায়ক।
* অ্যাসাইক্লোভির
* ফ্যামসাইক্লোভির
* ভ্যালাসাইক্লোভির

★ ব্যথা নিরাময়ে –
* প্যারাসেটামোল
* আইবুপ্রোফেন

★ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল –
যদি ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন থাকে,

★ স্টেরয়েড –
যদি চোখ আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

আলসারেটিভ কোলাইটিস, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার
লিভার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে হতে পারে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার আলসারেটিভ কোলাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে প্রতি ৬ জনের একজন মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?
অন্যান্য

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?

হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।