সব রিপোর্ট নরমাল তবুও পেটে গ্যাস, কারণ কি?

লিভারের রোগ নির্নয়ে ফাইব্রোস্ক্যান

Share This Post

এটাকেই বলে নন-আলসার ডিসপেপসিয়া বা ফাংশনাল ডিসপেপসিয়াঃ

কোন সুনির্দিষ্ট কারণ এবং গঠনগত রোগ ছাড়া বদহজমের যে লক্ষ্মণ উপসর্গ প্রকাশ পায় তা-ই নন-আলসার ডিসপেপসিয়া।

এটাই সচরাচর দেখা দেয় এবং দীর্ঘ কাল ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। যদিও এন্ডোসকপিতে কোন প্রকার সমস্যা থাকে না, তথাপি এতে পেপটিক আলসারের ন্যায় পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, পেট ভরা লাগা, পেট ফাঁপা লাগা, ঢেকুর উঠা এবং বমি বমি ভাব লাগতে পারে।

কারণঃ

অনেক সময় এর প্রকৃত কারণ জানা যায় না। চিকিৎসকগণ একে ফাংশনাল সমস্যা হিসেবে ধরে নেন যার মানে হলো এই সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই।

সম্ভাব্য নিয়ামকঃ

কিছু ফ্যাক্টর যা এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় –

★ অনিদ্রা ও অধিক রাত জাগা

★ মানসিক উদ্বেগ অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা

★ মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন

★ ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকাসক্তি

★ কায়িক পরিশ্রমবিমুখ হয়ে আয়েসি জীবন যাপন করা

★ কিছু ওষুধ সেবন – ব্যথানাশক (NSAIDs – অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন

পেটে গ্যাসের সমস্যা বা ডিসপেপসিয়া। কারণ কি, চিকিৎসা কি…

লক্ষ্মণ উপসর্গসমূহঃ

* পেটের উপরিভাগে ও বুকের নিচে অস্বস্তি কিংবা জ্বালা পোড়ার অনুভূতি যা কখনও কখনও খাবার কিংবা অ্যান্টাসিড সেবনে নিবৃত্ত হয়।

* পেট ভরা ভরা লাগা

* পেট ফাঁপা লাগা

* ঢেকুর উঠা

* অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া

* বমি বমি ভাব

চিকিৎসাঃ

রোগ ইতিহাস নেওয়া

ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা

ল্যাব টেস্ট –

রক্ত পরীক্ষা – এইচ পাইলোরি অ্যান্টিবডি

মল পরীক্ষা – এইচ পাইলোরি অ্যান্টিজেন

এন্ডোসকপি – একেবারেই স্বাভাবিক থাকবে (কোন ঘা বা আলসার, টিউমার বা ক্যান্সার,পলিপ, ইরোশন, ইনফ্ল্যামেশন, রক্তপাত, মটিলিটি ডিজর্ডার কিছুই থাকবে না)

এধরণের সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং জীবনধারায় পরিবর্তনেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।  লক্ষ্মণ উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে। আর চিকিৎসায় ওষুধের সাথে বিহেভিওরাল থেরাপিরও সমন্বয় থাকতে হবে।

* অ্যান্টাসিড – এগুলো পাকস্থলীর এসিড নিউট্রালাইজ করে পেটের ব্যথা কমায়

* গ্যাসের ওষুধ – সিমেথিকোন

* এসিড উৎপাদন কমানোর ওষুধ –

H-2 Blocker (ফ্যামোটিডিন)

* এসিড উৎপাদন বন্ধ করার ওষুধ –

Proton Pump Inhibitor (ওমিপ্রাজল, রেবিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ল্যানসোপ্রাজল)

* LOS এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ওষুধ – গ্যাস্ট্রোপ্রোকাইনেটিক ওষুধ (ডমপেরিডন) যা পাকস্থলী দ্রুত খালি করে ও LOS কে টাইট করে উপরের পেটের অস্বস্তি কমায়।

* মাংস পেশীর সংকোচন কমানোর ওষুধ – পাকস্থলীর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে (টাইয়েমোনিয়াম)

* লো ডোজ অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট – পরিপাক তন্ত্রের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে (অ্যামিট্রিপটাইলিন, নরট্রিপটাইলিন)

* অ্যান্টিবায়োটিক – এইচ পাইলোরি কিংবা SIBO নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

বিহেভিওরাল থেরাপি

ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় না হলে পরে কাউন্সেলিং কিংবা থেরাপিতে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। রিলেক্সেশন থেরাপিতে মানসিক উদ্বেগ অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কমে এবং একই সাথে নন-আলসার ডিসপেপসিয়ার লক্ষ্মণ উপসর্গগুলোও আর থাকে না।

জীবন ধারায় পরিবর্তন আনাঃ

অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন ধারায় পরিবর্তন এনে এই ধরনের বদহজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনঃ

১) অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর খাওয়া

* খালি পেটে থাকা যাবে না

* কিছু ক্ষণ পরপর এক টুকরো ফল কিংবা বিস্কুট  খাওয়া যেতে পারে

* খাবার খেতে ভুলে যাওয়া যাবে না

* এক বসাতে অনেক খাবার খাওয়া যাবে না।

২) প্রশমক খাবার পরিহার করতে হবে

যেসব খাবার খেলে বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে – বাজে তেলে তৈরি খাবার, অধিক মশলাযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, ক্যাফেইনযুক্ত চা কফি, অ্যালকোহল।

৩) ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাবার খেতে হবে

৪) পাকস্থলীতে অতিরিক্ত বাতাস যাতে না প্রবেশ করতে পারে সেজন্য ধূমপান, দ্রুত খাবার গ্রহণ, চুইংগাম চিবানো, স্ট্রতে করে তরল পানীয় খাওয়া এবং কোমল পানীয় গ্রহণ পরিহার করতে হবে।

৫) খাওয়ার খাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসে থাকা – শোওয়ার অন্তত ৩ ঘন্টা পূর্বে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

প্রাত্যহিক জীবনে স্ট্রেস কমাতে হবেঃ

১) বর্তমানে চলমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এই স্ট্রেস নিরাময় করতে শারীরিক ব্যায়াম করা কিংবা গান শোনা যেতে পারে

২) প্রশান্তিয় প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি শেখা এবং চর্চা করা

৩) শৌখিন কাজে সময় দেওয়া – খেলাধুলা কিংবা শখের কাজের সময়টি উপভোগ করা

সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় শারীরিক ব্যায়াম করুনঃ

১) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম শুরু করা যেতে পারে

২) ধীরে ধীরে শারীরিক ব্যায়ামের কর্মসূচী বাড়াতে হবে

৩) নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামে অভ্যস্ত হতে হবে – দৈনিক অন্তত ৩০-৬০ মিনিট করে শারীরিক ব্যায়াম একটি আদর্শ দৈহিক ওজন বজায় রাখতে এবং অনেক দীর্ঘ মেয়াদি রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে।

৪) খাওয়ার অব্যবহিত পরেই শারীরিক ব্যায়াম করা যাবে না।

ডাঃ এম সাঈদুল হক

সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।

০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮

০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

আলসারেটিভ কোলাইটিস, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলোরেকটাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার
লিভার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার

আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে হতে পারে মরণব্যাধি কোলন ক্যান্সার আলসারেটিভ কোলাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না হলে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হয়ে প্রতি ৬ জনের একজন মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?
অন্যান্য

হায়াটাস হার্নিয়া কি কঠিন কোন রোগ?

হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।