লিভার সিরোসিস হলো লিভারের একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ধীরে ধীরে অগ্রসরমান রোগ, যেখানে লিভারের সুস্থ কোষ ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে আঁশযুক্ত টিস্যু বা দাগ পড়ে। এই প্রক্রিয়াটি লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সম্পূর্ণরূপে অকেজো হতে পারে। লিভার সিরোসিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন বিষাক্ত পদার্থ দূর করা, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শোষণ করা, এবং রক্ত জমাট বাঁধার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।
১) ফ্যাটি লিভারের ব্যাপক বিস্তার,
২) দেহের ওজনাধিক্য – অতি ভোজন, বাজে তেল ও অধিক শর্করা জাতীয় খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, আয়েশী জীবন যাপন,
৩) অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,
৪) হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব – এই রোগ সম্পর্কে অসচেতনতা, চিকিৎসায় অনীহা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া, দক্ষ ও অভিজ্ঞ লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শমত চিকিৎসা না নেওয়া, ওষুধের রেজিস্ট্যান্স বা অকার্যকারিতা, নিরীক্ষা বিহীন রক্ত পরিসঞ্চালন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা না নেওয়া, অনিরাপদ যন্ত্রপাতি দ্বারা নাক কান ফোঁড়ানো, উল্কি আঁকা, দাঁতের স্কেলিং বা কাজ করানো, সার্জারি করা, এন্ডোসকপি কোলনস্কপি করা, ডায়ালাইসিস করা, অরক্ষিত যৌন মিলন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা ইত্যাদি।
৫) মদ্যপান ও মাদকাসক্তি,
৬) চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – মিথোট্রেক্সেট, অ্যামিওডারোন, আইসোনিয়াজিড;
৭) বিবিধ রোগের কারণে –
হাইপোথাইরয়েডিজম, অটোইমিউন হেপাটাইটিস, উইলসন’স ডিজিজ, হিমোক্রোম্যাটোসিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিন ডেফিসিয়েন্সি, বিলিয়ারি অ্যাট্রেশিয়া, অ্যালজিল সিন্ড্রোম, প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস, প্রাইমারি স্ক্লেরোজিং কোলেনজাইটিস, গ্যালাকটোসেমিয়া ইত্যাদি।
৮) ইনফেকশন – শিস্টোসোমিয়াসিস, সিফিলিস, ব্রুসেলোসিস,
৯) ক্রনিক হার্ট ফেইলিউর,
১০) অ্যামাইলয়ডোসিস,
১১) বিষাক্ত পদার্থের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া –
আর্সেনিক, লেড;
১২) অজানা কারণে – ক্রিপটোজেনিক সিরোসিস।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়ই লক্ষণগুলি বোঝা কঠিন হয়। তবে সিরোসিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো ত্বকে ও চোখে হলদে ভাব (জন্ডিস), শরীরে পানি জমা হওয়া (এডিমা), পেট ফোলা, ক্লান্তি, এবং ওজন কমে যাওয়া।
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের পর্যায় এবং কারণের ওপর। তবে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় করা কঠিন। চিকিৎসকেরা সাধারণত জীবনযাত্রা পরিবর্তন এবং কিছু ওষুধের মাধ্যমে এর অগ্রগতি ধীর করার চেষ্টা করেন।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭৩৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬