সাইকোজেনিক ভমিটিং বা সাইক্লিক্যাল ভমিটিং এই সমস্যাটি নিয়ে প্রায়শই আমাদের কাছে অনেক রুগী আসেন যাদের প্রায় প্রায় বমি হয়,উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়, অস্থির লাগে, বুক ধরফর করে এবং পেটে অস্বস্তি হয়।এই রোগটি সাধারণত ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুণ/তরুণীদের মাঝে বেশি দেখা যায়।
আমাদের কাছে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন যে বাচ্চাগুলো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বমি এবং অস্থিরতায় ভোগে।সাধারণত দেখা যায় এসব বাচ্চাদের স্কুলফোবিয়া বা স্কুলে যাবার যে ভীতি তা থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।উঠতি তরুণ কিংবা অন্যসব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ রোগের সৃষ্টি হয় দৈনন্দিন কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা অথবা কাজ করার যে চ্যালেঞ্জ তা গ্রহণের জটিলতা থেকে।
এক্ষেত্রে সকালে উঠে ভীষণ অস্থির লাগা,বমি বমি ভাব এবং মাঝেমাঝে বমি হয়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো প্রকট আকারে দেখা দেয়।এই সমস্যাটি আরো দেখা দিতে পারে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে।তাছাড়া যারা মদ্যপায়ী অথবা অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদক সেবন করে থাকেন তারা এ রোগে ভোগেন বেশি।
এসব রোগীদের পরীক্ষানিরীক্ষা করলে দেখা যায় তাদের দৈহিক ওজন মোটামুটি ঠিক থাকে এবং শরীর স্বাস্থ্যও পরিলক্ষিতভাবে নস্ট হয়না।
এক্ষেত্রে আমরা গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞরা বলে থাকি লাইফস্টাইল মোডিফিকেশনের কথা। সেক্ষেত্রে পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত ব্যায়াম, পরিমিত ঘুম অন্তত ৭-৮ ঘন্টা এবং রিল্যাক্সেশন থেরাপি বিশেষ করে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, খেলাধুলা করা এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য যে কাজগুলো আছে সেগুলো ভালো ফলাফল দেয়।
চিকিৎসার জন্য এক্ষেত্রে আমরা গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞরা কিছু সময়ের জন্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে থাকি অথবা রিল্যাক্সেশনের জন্য এন্টিডিপ্রেসেন্ট, ট্রাইসাইক্লিকএন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং ডমপেরিডোন জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। তবে এসব ওষুধ অবশ্যই ভালো কোন গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
সর্বোপরি, উঠতি তরুণ বা ছোট বাচ্চাদের ঘন ঘন বমি হওয়া, অথবা এই বমির সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি মনো-দৈহিক সমস্যা।
মানসিক প্রশান্তি,পরিমিত ঘুম এবং শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি মানসিক অস্থিরতা বা উদ্বিগ্নতা দূর করার মাধ্যমে এই রোগটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬