অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া:
এই অবস্থাটি হতে পারে যখন অল্প খেলেই মনে হয় যেন পেট ভরে গেছে। এটি সাধারণত হয়ে থাকে গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিসে (এমন একটি অবস্থা যেখানে আংশিক পরিপাককৃত খাবার পাকস্থলী থেকে ধীরে ধীরে খালাস হয়)।
অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে
★ GOO বা গ্যাস্ট্রিক আউটলেট অবস্ট্রাকশন
★ GERD বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ
এ অবস্থাটি হয়ে থাকে যখন কোন ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারেন না কিংবা কয়েক লোকমা মুখে দেওয়ার পরই মনে হয় যেন পেট ভরে গেছে।
ফলশ্রুতিতে —
স্বল্প মেয়াদে – বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয়ে যেতে পারে, আর
দীর্ঘ মেয়াদে – রোগী পুষ্টিহীনতার শিকার হতে পারে এবং স্বাস্থ্য হানি ঘটতে পারে।
সচরাচর যে লক্ষ্মণ উপসর্গগুলো দেখা দেয়
★ পেট পুরে পরিমাণ মতো খাবার খেতে ব্যর্থতা;
★ অল্প খেলেই পেট ভরা ভরা লাগার অনুভূতি হওয়া ;
★ খাওয়ার সময় বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয়ে যাওয়া।
কারণঃ
১) গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস – এতে রোগীর পেট ভার লাগা, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া করা, পেটে ব্যথা ও খাওয়ায় অরুচি দেখা দিতে পারে।
আর এই অবস্থাটির জন্য ডায়াবেটিস হলো মূল কারণ যার দরুন পাকস্থলীর স্নায়ুব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে।
২) গ্যাস্ট্রিক আলসার ;
৩) GERD – যেখানে পাকস্থলীর এসিড ব্যাকফ্লো করে খাদ্য নালীতে চলে এসে প্রদাহ তৈরি করে ;
৪) GOO – যেখানে পাকস্থলী হতে আংশিক পরিপাককৃত খাবার সহজে ক্ষুদ্রান্ত্রে যেতে পারে না;
৫) আইবিএস;
৬) কোষ্ঠকাঠিন্য ;
৭) লিভারের আকৃতি বেড়ে যাওয়া ;
৮) পেটে পানি বা অ্যাসাইটিস ও
৯) ক্যান্সার
ডায়াগনোসিসঃ
যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নিমিত্তে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিতে হয়-
★ রোগ ইতিহাস
★ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা
★ ল্যাব টেস্ট
ক) CBC – এর মাধ্যমে দেহের কোথাও রক্ত ক্ষরণ কিংবা দেহে রক্ত স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে কি না সেটা জানা যায় ;
খ) Stool OBT – এর মাধ্যমে পরিপাক তন্ত্রের কোথাও হতে রক্ত ক্ষরণ বুঝতে পারা যায় ;
গ) USG of W/A – এর মাধ্যমে পাকস্থলীতে কোন টিউমার বা অবস্ট্রাকশন বুঝা যায়;
ঘ) Ba-meal X-ray – এর মাধ্যমে পাকস্থলীর আলসার, টিউমার বা ডিওডেনামের অবস্থা জানা যায় ;
ঙ) Endoscopy of UGIT – এর মাধ্যমে মুখ গহ্বর থেকে ডিওডেনামের ২য় অংশ পর্যন্ত কোনো আলসার, টিউমার, পলিপ, ইরোশন, রক্তপাত, খাদ্য নালী চেপে যাওয়া ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা যায় ;
চ) Gastric emptying breath test – এর মাধ্যমে কত দ্রুত পাকস্থলী খালি হয়ে যায় সেটা পর্যবেক্ষণ করা যায় ;
ছ) Gastric emptying scintigraphy – এর মাধ্যমে কত দ্রুত খাবার পাকস্থলী হতে ক্ষুদ্রান্ত্রে নেমে যায় সেবা পর্যবেক্ষণ করা যায় ;
জ) Smartpill – এর মাধ্যমে পরিপাক তন্ত্রের অ্যাসিডের pH, চাপ ও তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
চিকিৎসাঃ
রোগের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয় –
তবে কিছু সাধারণ চিকিৎসাও এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী
* সারাদিন ব্যাপী অল্প অল্প করে খাওয়া
* নরম ও তরল খাবার গ্রহণ
* চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া
* মুখ রোচক খাবার গ্রহণ (Appetizer)
* Domperidon জাতীয় ওষুধ গ্রহণ
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ
১) Gastric electrical stimulant – এর মাধ্যমে বমি বমি ভাব কিংবা বমি প্রতিরোধ করা যায় ;
২) Feeding tubes – এর মাধ্যমে খাদ্য নালী বাইপাস করে সরাসরি পাকস্থলীতে খাবার পৌঁছানো যায়;
৩) TPN – এর মাধ্যমে শিরাপথে তরল পুষ্টি সরবরাহ করা হয় ;
৪) Jejunostomy – এর মাধ্যমে সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্রে পুষ্টি সরবরাহ করা হয়।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬