হায়াটাস হার্নিয়া হলো যখন ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা’র মাংসপেশীর দুর্বলতার কারণে পাকস্থলীর অংশবিশেষ বুকের দিকে উঠে আসে। ফলশ্রুতিতে এসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
হায়াটাস হার্নিয়া দুই প্রকার-
(১) স্লাইডিং হায়াটাস হার্নিয়া – এই প্রকারের হার্নিয়াই সচরাচর বেশি পাওয়া যায় এবং এসিড রিফ্লাক্স এর লক্ষ্মণগুলো প্রকাশ করে।
(২) প্যারা-ইসোফেজিয়াল বা রোলিং হায়াটাস হার্নিয়া – এই প্রকারের হার্নিয়া কম পাওয়া যায় এবং এটি পাকস্থলীর অংশবিশেষ ডায়াফ্রামের মাঝে আটকে অবস্ট্রাকশন সহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিভিন্ন কারণে হায়াটাস হার্নিয়া হতে পারে-
পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি – বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াফ্রামের মাংস পেশীর দুর্বলতার সাথে মেদ-ভুরি, ক্রনিক কাশি, পরিবারে কারও হায়াটাস হার্নিয়া থাকার ইতিহাস, পুনঃপুন ভারোত্তোলনের কারণে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পাকস্থলীর আশেপাশে অপারেশনের ফলে, কু্ঁজো কিংবা আঁকা বাঁকা মেরুদণ্ডের কারণে রোলিং হায়াটাস হার্নিয়া হতে পারে।
হায়াটাস হার্নিয়ার লক্ষ্মণ সমূহ-
অনেকেরই হায়াটাস হার্নিয়া থাকলেও লক্ষ্মণ তেমন থাকে না।
১. এসিড রিফ্লাক্স : এর ফলে বুক জ্বালাপোড়া কিংবা গলা জ্বালা পোড়া করা, উপরের পেটে কিংবা বুক ব্যথা করা, অসুস্থ বোধ করা, মুখে এসিডের অম্ল স্বাদ পাওয়া, পেট ফাঁপা, ঢেকুর তোলা, খাবার গিলতে সমস্যা, গরম পানীয় খাওয়ার সময় বুক জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি হতে পারে।
এই লক্ষ্মণ উপসর্গগুলো কখনও থাকে কিংবা থাকে না তবে খাওয়ার পরপরই প্রকাশ পায়।
অন্য কিছু রোগের মতো কিছু লক্ষ্মণ উপসর্গ দেখা দেয় –
২. দীর্ঘ মেয়াদী শুকনো কাশি – বিশেষ করে রাতের বেলা এসিড রিফ্লাক্সের কারণে অ্যাজমা রোগীর ন্যায় কাশি ও শ্বাসকষ্ট ;
৩. দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, গলায় প্রদাহ, কর্কশ কন্ঠস্বর এবং গলায় কি যেন আটকে থাকার অনুভূতি;
৪. মাঝে মাঝে তীব্র বুকে ব্যথা যেটা কিনা হার্ট অ্যাটাকের ন্যায় মনে হয়;
৫. কিছু বিরল ক্ষেত্রে রোলিং হায়াটাস হার্নিয়াতে পাকস্থলীর অংশ বিশেষ ডায়াফ্রামে আটকে যেয়ে প্রচন্ড পেটে ব্যথা কিংবা বুক ব্যথার কারণ হতে পারে।
হায়াটাস হার্নিয়া থাকলেই এসিড রিফ্লাক্স হবে তা কিন্তু নয়, অনেক সময় দেখা যায় হায়াটাস হার্নিয়া যাদের রয়েছে তাদের প্রায় অর্ধেকেরই কোন প্রকার লক্ষ্মণ উপসর্গ থাকে না।
হায়াটাস হার্নিয়া ডায়াগনোসিস করা হয় দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে-
১. খাদ্যনালী বা ইসোফ্যাগাসের ব্যারিয়াম সোয়ালো এক্স-রে,
২. এন্ডোসকপি।
হায়াটাস হার্নিয়ার চিকিৎসা :
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হায়াটাস হার্নিয়াতে চিকিৎসা তেমন লাগে না। আর এটা থেকে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই।
লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন:
ক. শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে হবে
খ. টাইট জামা অথবা বক্ষ বন্ধনি বা পেট বন্ধনি পরিহার করতে হবে যা হতে পেটের ভেতরের চাপ বেড়ে যায়।
গ. ধূমপান, মাদক ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
ঘ. বিছানার মাথার দিকের অংশটি উঁচু করে কিংবা উঁচু বালিশে শুতে হবে।
ঙ. খাবার গ্রহণ করার সাথে সাথে শেওয়া যাবে না, খাবার খাওয়ার অন্তত ৩ ঘন্টা পরে বিছানায় যেতে হবে।
চ. ভরপেট না খেয়ে অল্প খাবার গ্রহণের অভ্যাস করা।
ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা :
লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের পরেও যদি আশানুরূপ ফল না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে —
ব্যক্তিভেদে ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, ল্যানসোপ্রজল, প্যান্টোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল, ডেক্সল্যানসোপ্রজল, ফ্যামোটিডিন, অ্যান্টাসিড ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা :
লাইফ স্টাইল পরিবর্তন কিংবা ওষুধের মাধ্যমেও যদি উন্নতি না হয় অথবা রোলিং হায়াটাস হার্নিয়াতে জটিলতা জনিত পাকস্থলীর অংশ বিশেষ যদি ডায়াফ্রামে আটকে যায় সেক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে ডায়াফ্রামের দুর্বল পেশীর অংশটি মেরামত করে দেওয়া হয়।
হায়াটাস হার্নিয়া হতে সম্ভাব্য জটিলতা :
দীর্ঘ মেয়াদী হায়াটাস হার্নিয়াতে কিংবা অসম্পূর্ণ চিকিৎসায় নিম্নোক্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে—
১. ইসোফ্যাজাইটিস বা খাদ্য নালীর প্রদাহ
২. শুকনো কাশি
৩. খাদ্য নালী বা ইসোফ্যাগাস সরু বা স্ট্রিকচার হয়ে যাওয়া
৪. ভলভুলাস বা স্ট্র্যাংগুলেশন – রোলিং হায়াটাস হার্নিয়ার ক্ষেত্রে পাকস্থলীর অংশ বিশেষ ডায়াফ্রামে আটকে যাওয়া
৫. ব্যারেট’স ইসোফ্যাগাস – এটি একটি বিশেষ অবস্থা যা হতে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের আবির্ভাব ঘটতে পারে;
৬. খাদ্য নালীর ক্যান্সার – দীর্ঘ মেয়াদে রিফ্লাক্স ইসোফ্যাজাইটিস হতে ক্যান্সার হওয়ার বিরল সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন-